নারীর গর্ভপাতঃ একটি বিতর্কের অবসান

গর্ভবতী মায়ের জরায়ু হতে অপরিণত ভ্রুণ বেরিয়ে আসাকে গর্ভপাত বলা হয়। এই গর্ভপাত স্বঃপ্রণোদিত হতে পারে আবার অনিচ্ছাকৃত হতে পারে। গর্ভপাত কৃত্রিম ভাবেও করা যায় আবার প্রাকৃতিক ভাবে গর্ভকালীন জটিলতার কারণেও গর্ভপাত হয়ে থাকে।
কিন্তু প্রাকৃতিক ভাবে যে গর্ভপাত ঘটে তাতে কারো হাত থাকে না বিধায় সে বিষয় নিয়ে আমরা মাথা ঘামায় না। কিন্তু কোন গর্ভবতী নারী যদি স্বঃপ্রনোদিত হয়ে নিজের গর্ভপাত ঘটান তাহলেই শুরু হয়ে যায় তুমুল বিতর্ক। এই কৃত্রিম গর্ভপাতের কথা উঠলে নীতি-নৈতিকতা, দর্শন, জীববিজ্ঞান, ধর্ম বা আইন সব কিছুই এসে পড়ে আমাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। উঠে পড়ে মূল্যবোধ, সরকারের দায়িত্ব ও নারী অধিকারের প্রশ্ন৷ দেশ, সমাজ, এমনকি ধর্ম অনুযায়ী বিশ্বের সর্বত্র গর্ভপাত সংক্রান্ত আইনকানুন আলাদা৷অথচ গর্ভপাত এমন একটি বিভাজক প্রসঙ্গ যে, আইন করে দু'পক্ষকে ঠাণ্ডা করা চলে না।

তবে গত ২৮ অক্টোবর’২০১৭ গর্ভপাত বিতর্কের অবসান ঘটানোর মত যুগান্তকারী একটি রায় দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।গর্ভপাত করাতে স্বামীর অনুমতি নেওয়ার আর কোনো প্রয়োজন নেই। গর্ভের সন্তান রাখবেন নাকি গর্ভপাত করাবেন, সেই সিদ্ধান্ত ওই নারীই নেবেন বলে রায় দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। দেশটির প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি এ এম খালউইলকর ও বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ এক ব্যক্তির আবেদন খারিজ করে দিয়ে এই রায় দিয়েছেন।

আদালত জানিয়েছেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী যদি তাঁর গর্ভের ভ্রূণকে জন্ম দিতে না চান, তাহলে সেই সিদ্ধান্তে অন্য কারও হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই। উল্লেখ্য, ভারতীয় আইনে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ২০ সপ্তাহ পর গর্ভপাত নিষিদ্ধ। মামলার ঘটনা থেকে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে ওই দম্পতি বিয়ে করেন। পরের বছর তাঁদের পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। দাম্পত্য কলহের কারণে সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী ১৯৯৯ সাল থেকে তাঁর বাবার বাড়ি চণ্ডীগড়ে থাকেন। বিয়ে বিচ্ছেদের মামলা চলাকালে চণ্ডীড়ের একটি আদালত ওই নারীকে আবার কিছুদিন স্বামীর বাড়িতে একসঙ্গে থেকে বিষয়টি মীমাংসা করে নেওয়ার নির্দেশ দেন। ২০০২ সাল থেকে তাঁরা একসঙ্গে থাকা শুরু করেন। ২০০৩ সালে তিনি আবারও অন্তঃসত্ত্বা হন। কিন্তু এতেও তাঁদের দাম্পত্য সম্পকেঅর কোনো উন্নতি না হওয়ায় গর্ভপাত করাতে চান ওই নারী। কিন্তু এতে বাঁধা দেন স্বামী। পরে ওই নারীর বাবা তাঁকে স্বামীর বাড়ি থেকে চণ্ডীগড়ে নিয়ে যান। সেখানে চন্ডীগড় হাসপাতালে তিনি গর্ভপাত করান। কিন্তু স্বামী হিসেবে হাসপাতালের কাগজপত্রে ওই ব্যক্তি কোনো সম্মতিসূচক কোনো স্বাক্ষর করেননি।অনুমতি না নিয়েই গর্ভপাত করানোর কারণে বাবা হিসেবে যে মানসিক যন্ত্রণা পেয়েছেন এর ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন ওই ব্যক্তি। তিনি স্ত্রী, তাঁরা বাবা, ভাই ও চন্ডীগড় হাসপাতালের দুই চিকিৎসকের কাছে ৩০ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেন। তাঁর দাবি, অনাগত সন্তানের বাবাকে না জানিয়ে ও কোনো প্রয়োজন ছাড়াই গর্ভপাত ঘটানো আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ ও অপরাধ। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট ওই ব্যক্তির আবেদন খারিজ করে দেন। পরে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সুপ্রিম কোর্টও একই রায় দেন।

সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছেন, কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী যদি তাঁর গর্ভের ভ্রূণকে জন্ম দিতে না চান, তাহলে সেই সিদ্ধান্তে অন্য কারও হস্তক্ষেপের কোনো অধিকার নেই। এমনকি মানসিক ভারসাম্যহীন কোনো নারীও চাইলে গর্ভের ভ্রূণের গর্ভপাত করাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর একার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আরও জানিয়েছেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য একজন নারীর মানসিক প্রস্তুতি দরকার। অপ্রত্যাশিত সন্তানের জন্ম নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই গর্ভের সন্তান রাখবেন না-কি গর্ভপাত করাবেন তা অন্তঃসত্ত্বা একাই সিদ্ধান্ত নেবেন। এই রায় দেওয়ার পাশাপাশি আদালত ওই মামলার বিবাদীদের (স্ত্রী, স্ত্রীর বাবা, ভাই ও দুই চিকিৎসককে) প্রত্যেককে ২৫ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ দিতে মামলাকারী ব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এবার গর্ভপাত বিষয়ে আরেকটি যুগান্তকারী রায় নিয়ে কথা বলা যাক যে রায় টি রো বনাম ওয়েড নামে সমাধিক পরিচিত।
আমরা দেখেছি আইন অনেক সময় ধরি মাছ না ছুঁই পানি করে পরিস্থিতির সামাল দেবার চেষ্টা করেছে৷ এক্ষেত্রে প্রথমেই নাম করতে হয় ‘রো বনাম ওয়েড' মামলাটির, যা যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাস সৃষ্টি করে৷ ঐ মামলায় আদালত সিদ্ধান্ত নেন যে, ‘‘একটি মনুষ্যজীবনের সম্ভাবনা সুরক্ষিত করতে (রাষ্ট্রের) গুরুত্বপূর্ণ ও বৈধ স্বার্থ'' আছে - বিশেষ করে ‘পয়েন্ট অফ ভায়াবিলিটি' বা যে সময় থেকে ভ্রুণটি একা বেঁচে থাকতে পারে, সেখান থেকে৷ কিন্তু সেই ‘পয়েন্ট অফ ভায়াবিলিটি'-তে পৌঁছানোর আগে নারীদের বুনিয়াদি অধিকারকে রাষ্ট্রের স্বার্থের চেয়ে বেশি বাধ্যতামূলক বলে গণ্য করা হবে৷ রো বনাম ওয়েড মামলার এই রায়ের ফলে ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের গর্ভপাত নিষেধ আইন বাতিল হয়৷ 

দেশে দেশে গর্ভপাত বিতর্ক
গর্ভপাত নিয়ে যে কোন দেশে যতবারই জরিপ করা হোক না কেন, তার ফলাফল ভিন্ন হতে বাধ্য৷ যেমন চেক প্রজাতন্ত্রে মহিলাদের গর্ভপাতের অধিকার সমর্থন করেন অধিকাংশ মানুষ, কিন্তু পোল্যান্ডে সেই সংখ্যা তত বেশি নয়৷ উত্তর অ্যামেরিকায় ক্যানাডা আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটা অনুরূপ প্রভেদ লক্ষ্য করা যায়৷
অপরদিকে মেক্সিকোর মতো দেশে জনগণের একটা বড় অংশ গর্ভপাতের বিরোধী৷ এক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা মেক্সিকোর তুলনায় বেশি উদার৷ অপরদিকে ব্রাজিল কিংবা কলম্বিয়ার জনসাধারণের একটা বড় অংশ গর্ভপাত বৈধ করা উচিত নয়, বলে মনে করেন৷

বাংলাদেশ দন্ডবিধি কি বলে গর্ভপাত সম্পর্কে?
বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৩১২ থেকে ৩১৬ ধারা পর্যন্ত গর্ভপাত সংক্রান্ত আইন ও সাজার কথা বলা হয়েছে। ৩১২ ধারায় বলা হয়েছে কোন নারী গর্ভপাত ঘটালে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তিন বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড বা জরিমানা বা উভয় প্রকার শাস্তি পেতে পারে।
৩১৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রীলোকটির সন্মতি ছাড়া গর্ভপাত ঘটায়, তাহলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাবাস, জরিমানা বা দশ বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হতে পারেন।
৩১৪ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রীলোকটির সন্মতি ছাড়া গর্ভপাত ঘটাইবার উদ্দেশ্যেজনিত কার্যে মৃত্যু ঘটায়, তাহলে ওই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাবাস বা উপযুক্ত দন্ডে দন্ডিত হবে।
৩১৫ ধারায় বলা হয়েছে, শিশু যাহাতে জীবন্ত জন্মিতে না পারে, বা উহা যাতে জন্মের পর পর মারা যায় সেই উদ্দেশ্যে কোন কার্য করিলে উক্ত ব্যক্তি দশ বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড বা জরিমানা বা উভয় প্রকার শাস্তি পেতে পারে।
৩১৬ ধারায় বলা হয়েছে, এমন কোনো কার্য দ্বারা আসন্ন প্রসব গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু ঘটানো, যাহা অপরাধজনক প্রাণনাশ বলিয়া গণ্য হয়, এমন কোনো কার্য করিলে উক্ত ব্যক্তি দশ বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড ও জরিমানা দন্ডে দন্ডিত হবে।

বালাদেশে গর্ভপাতের হারঃ
সর্বশেষ জরিপ (২০১৪) বলছে, দেশে বছরে ১১ লাখ ৯৪ হাজার স্বপ্রণোদিত গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ, দৈনিক গড়ে এ ধরনের গর্ভপাতের সংখ্যা ৩ হাজার ২৭১টি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গুতম্যাকার ইনস্টিটিউট ২০১৪ সালে এই জরিপ করেছিল। এই প্রতিষ্ঠান জনসংখ্যা, প্রজনন স্বাস্থ্যের মতো বিষয় নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলসহ বিশ্বের একাধিক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা করে থাকে। বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রিভেনশন অব সেপটিক অ্যাবোরশন, বাংলাদেশ (বাপসা) ২০১৪ সালের জরিপের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সম্প্রতি জরিপের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এই তথ্য এখন ব্যবহার করছে। জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ১ হাজার নারীর মধ্যে ২৯ জন স্বপ্রণোদিত গর্ভপাত করান। এ ধরনের গর্ভপাতের হার সবচেয়ে বেশি খুলনা বিভাগে। এই বিভাগে ১ হাজার নারীর মধ্যে ৩৯ জন গর্ভপাত করান। সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে গর্ভপাতের হার ১৮।

ধর্ম কি বলে?
গর্ভপাত নিয়ে পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান ধর্মমতই নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম ইত্যাদির গর্ভপাত-বিরোধী জেহাদের কথা সর্বজনবিদিত।
ইসলাম ধর্মঃ ইসলামী শরিয়ত শুরু থেকেই গর্ভপাতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাই ইসলামসম্মত কারণ ছাড়া গর্ভের সন্তান ফেলে দেওয়া বৈধ নয়। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘...তাদের (তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীদের) গর্ভাশয়ে আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন, তা গোপন রাখা তাদের জন্য বৈধ নয়, যদি তারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে...। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২৮)। তবে হ্যা গর্ভবতী মায়ের জীবন যদি হুমকির মুখে পড়ে, বিষয়টি যদি নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে নির্দেশিত হয়, তাহলে গর্ভস্থ সন্তানের বয়স চার মাস হওয়ার আগে গর্ভপাত ঘটানো বৈধ। হাদিসের ভাষ্য থেকে জানা যায়, গর্ভস্থ সন্তানের বয়স চার মাস পূর্ণ হলে তার দেহে রুহ বা আত্মা ফুঁকে দেওয়া হয়। হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান নিজ নিজ মায়ের পেটে ৪০ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে অবস্থান করে, অতঃপর তা জমাট রক্তে পরিণত হয়। এভাবে ৪০ দিন থাকে। পরে তা মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়। এভাবে থাকে ৪০ দিন। এরপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। সে ফেরেশতাকে চারটি বিষয়ে আদেশ দেওয়া হয়।তাঁকে লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়, এ সন্তানের আমল, রিজিক, আয়ু এবং সে কি পাপী হবে, নাকি নেককার। অতঃপর তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দেওয়া হয়। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩২০৮)। এ হাদিসের আলোকে ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গর্ভস্থ সন্তানের বয়স ১২০ দিন হয়ে গেলে তা নষ্ট করা সর্বসম্মতক্রমে হারাম; কিন্তু রুহ আসার আগে এ সন্তান নষ্ট করার বিষয়ে ইসলামী আইনবিদদের মতভেদ আছে। বেশির ভাগের মতে তা বৈধ। কারো কারো মতে, তা মাকরুহ (নিন্দনীয়)। তবে যদি মায়ের শারীরিক মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে কিংবা সন্তানের স্বাস্থ্যগত মারাত্মক ঝুঁকি থাকে, তাহলে গর্ভজাত সন্তানের শরীরে রুহ আসার আগে গর্ভপাত ঘটানো যায়। এটা ইসলামের স্বতঃসিদ্ধ বিধান।

হিন্দু ধর্মঃ হিন্দুধর্মে গর্ভপাতকে কী চোখে দেখা হয়েছে, তা সচরাচর আলোচনাবৃত্তে আসে না। তবে হিন্দু ধর্মেও গর্ভপাতকে কঠোর ভাবে নিয়েধ করা হয়েছে। হিন্দু সনাতন ধর্মে এমন বিশ্বাস রয়েছে যে, অবিনশ্বর আত্মা ৮৪ লক্ষ যোনি ভ্রমণের পরে জন্মান্তরচক্র থেকে অব্যাহতি পায়। সে কারণে ‘জন্ম’ একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গর্ভপাত সেই জন্মচক্রে ছেদ ঘটায়। আত্মা তার স্বাভাবিক গতি থেকে বিচ্যুত হয়। হিন্দু স্মৃতিশাস্ত্রে ভ্রূণহত্যাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেবল প্রসূতির প্রাণসংশয় ঘটলে গর্ভপাতের বিধান দেয় আয়ুর্বেদ। স্মৃতিশাস্ত্র তাকে স্বীকার করে। ঋগ্বেদ, কৌশিতক উপনিষদ, অথর্ববেদ একযোগে ভ্রূণহত্যাকে ‘মহাপাপ’ বলে বর্ণনা করে। এবং পরলোকে এর জন্য চরম শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে বলে জানায়।

তবে ধর্মীয় আইন বা মনুষ্য সৃজিত আইন গর্ভপাতের বিষয়ে যতই কঠোর হোক না কেন সব আইনই একটি বিষয়ে একমত যে, গর্ভবতী মায়ের জীবন গর্ভের কারণে বিপন্ন হলে গর্ভপাত ঘটানো আইনসিদ্ধ।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

আমি আইন যুদ্ধে একজন লড়াকু সৈনিক। আইন সচেতন নাগরিক সমাজ গঠনে কাজ করে যাচ্ছি। পোস্টটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তাহলে নিচে একটি গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য অনুরোধ রইলো। আশা করি গঠনমূলক মন্তব্য করে আমাদের চলার পথকে আরো বেশি বেগবান করে তুলবেন।

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট