আদেশ লিখেন পিয়ন পেশকার কনস্টেবল, সই দেন বিচারক

ঢাকা জেলা জজ, মহানগর দায়রা জজ, সিএমএম  চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রায় সব মামলার ক্ষেত্রে আদেশ লিখেন সংশ্লিষ্ট আদালতের পিয়ন, পেশকার, উমেদার, জিআর সেকশনের কনস্টেবল এবং জিআরও। পরে সেসব লিখিত আদেশের নীচে বিচারক কেবল স্বাক্ষর করেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে কোনো কোনো মামলার ক্ষেত্রে শুনানির পূর্বে বিচারকের জন্য শুধু আদেশই লিখে রাখেন না পরবর্তী তারিখও ধার্য করে দেন ওইসব পিয়ন, পেশকার, উমেদার এবং জিআরও সেকশনের কনস্টেবলরা। সংশ্লিষ্ট মামলার অভিযোগে বা আরজিতে কোথায় কী আইনগত ফাঁক আছে, আইনজীবী শুনানিতে কী বলবেন এবং বিচারক ওই বিষয়ে কী আদেশ দিবেন তা কীভাবে ওইসব পিয়ন, পেশকার ও কস্টেবলরা আগে থেকেই জানেন তা রীতিমতো বিস্ময়ের ব্যাপার।

বিস্ময়ের মাঝেই লুকিয়ে আছে দুর্নীতির বীজ। বিভিন্ন আাদালত ও জিআর সেকশনে ঘুরে এই একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। আর এজন্যই আইনজীবী থেকে শুরু করে বিচারপ্রার্থীরা এসব অঘোষিত ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের তোয়াজ করে চলেন। নানাভাবে তাদেরকে রাজী-খুশি করার চেষ্টা করেন সবাই। কারণ তাদের কলমের খোঁচাতেই হতে পারে বড় কোনো লাভ বা ক্ষতি। এসব পিয়ন, পেশকার এবং কনস্টেবল একই সাথে বরের মাসী এবং কনের পিসী। সবার কাছ থেকেই তারা উৎকোচ নেন। যে যতো বেশি দেন তারাই তাদের স্বজন। এছাড়াও টাকায় চলে মামলার ফাঁক ফোকর জেনে নেয়া, সুবিধা মতো তারিখ ধার্য করাসহ আরও নানারকম সুবিধা। এসব পিয়ন, পেশকার এবং জিআর সেকশনের কনস্টেবল এবং জিআরওদের জবাবদিহিতার কিছুটা সুযোগ থাকলেও উমেদারদের কোনো প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নেই। কারণ তারা কোনো সরকারি কর্মচারী নয়। তাদের কাজের কোনো বৈধতা নেই। তাদের নিয়োগ দেন সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জিআরও এবং ম্যাজিস্ট্রেট। এরা তাদের পকেটের লোক বলে পরিচিত থাকেন। এদের নির্দিষ্ট কোনো বেতনও নেই। দুর্নীতিই এদের আয়ের উৎস। যার কাছ থেকে যেভাবে খুশি তারা আয় করতে পারেন। এখানে বেতন না পেয়েই তারা খুশি থাকেন। শুধু একটা চেয়ার থাকলেই হলো। শুধু নিয়োগকর্তাদের খুশি করলেই চলে তাদের। আর তাদের নিয়োগকর্তাদের খুশি করার জন্য তারা যে কাউকেই অখুশি করতে দ্বিধা করেন না। এসব পিয়ন, পেশকার, উমেদার, কনস্টেবল এবং জিআরওদের আদেশ লিখে দেয়ার কোনো সুযোগ আছে কী-না এবং এটি আইনসিদ্ধ কী-না এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট আজাদ রহমান বলেন, ‘আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক ব্যতীত অন্য কেউ আদেশ লিখতে পারবেন না।’ এসব অনৈতিক কাজ কীভাবে বন্ধ হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ওই আইনজীবী বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী ব্যতীত অন্য কাউকে আদালতের কোনো ধরনের কাজে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এটা বন্ধ করতে পারলেই অনৈতিক কাজ অনেকটাই দূর হবে। এছাড়া বিচারকের আদেশ অন্য কাউকে দিয়ে লেখানোর প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। মামলার পরবর্তী তারিখ দেয়ার কাজটিও বিচারকের হাত দিয়েই হতে হবে।’ ‘আইনজীবীর দাখিল করা ওকালতনামা, হাজিরা, পিটিশনে আইনজীবীর সিল সুস্পষ্ট কিনা তা দেখে জমা নিতে হবে। নথি থেকে কোনো কিছু হারানো গেলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করতে হবে। যতদিন এদের দৌরাত্ম্য এবং এসব বেআইনি কাজ বন্ধ করা না যাবে ততদিন বিচার বিভাগের কাগুজে পৃথকীকরণের সুফল বিচারপ্রার্থী তথা জাতি কখনওই পাবে না।’ তাই এদিকে দৃষ্টি দেয়া এখন সময়ের দাবি বলে অ্যাডভোকেট আজাদ রহমান দৃঢ়ভাবে বলেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে পাঠকের নিকট উপস্থাপন করাই আমাদের উদ্দেশ্য। এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং ল পার্কের প্রতিটি লেখাতেই (অন্য কোথাও থেকে সংগ্রহের ক্ষেত্রে) সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷


শেয়ার করুন

লেখকঃ

আমি আইন যুদ্ধে একজন লড়াকু সৈনিক। আইন সচেতন নাগরিক সমাজ গঠনে কাজ করে যাচ্ছি। পোস্টটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তাহলে নিচে একটি গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য অনুরোধ রইলো। আশা করি গঠনমূলক মন্তব্য করে আমাদের চলার পথকে আরো বেশি বেগবান করে তুলবেন।

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট