আয়কর কি, কেন, কিভাবে দিবেন? জেনে রাখুন

আমাদের রাজস্ব আয়ের একটা মূল খাত হল আয়কর। আয়কর হচ্ছে ব্যক্তি বা সত্ত্বার আয় বা লভ্যাংশরে উপর প্রদেয় কর । আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর আওতায় কর বলতে অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রদেয় আয়কর, অতিরিক্ত কর, বাড়তি লাভের কর, এতদসংক্রান্ত জরিমানা, সুদ বা আদায় যোগ্য অর্থকে বুঝায়।
অন্য ভাবে বলা যায় যে, কর হচ্ছে রাষ্ট্রের সকল জনসাধারনের স্বার্থে রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে প্রদত্ত বাধ্যতামূলক অর্থ।

আয়কর জমা দেয়ার প্রথম ধাপ হল আপনার একটা আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। “আয়কর রিটার্ন” হল আপনার আয়-ব্যয় এর একটি বার্ষিক প্রতিবেদন যা আপনাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর নির্দিষ্ট একটি ছকে পূরণ করে জমা দিতে হয়। আপনি ইচ্ছা করলে অনলাইনেও এই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারেন। এই লিংক হতে Click This Link আয়কর রিটার্ন ফিলআপের নিয়মাবলী জানতে পারবেন। আর হ্যাঁ, আপনি এই লিংক Click This Link এই লিংক হতে টিআইএন ফরম ফিলআপের গাইডলাইন পেয়ে যাবেন। কতিপয় ব্যাক্তির জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক, এ সম্পর্কিত বিশদ পাবেন এই লিংকেঃ Income Tax at a Glance এখানে আয়কর সংক্রান্ত মোটামুটি প্রয়োজনীয় সব তথ্যই পাওয়া যাবে। আর এই ফাইলটি রাজস্ব বোর্ড এর নিজস্ব ওয়েবসাইটের।
এখন আপনাকে একবারে প্রথমবার আপনার মোট সম্পদের একটা হিসেব দিতে হবে। পরবর্তী বছরগুলোতে আপনার মোট আয় হতে মোট ব্যয় বাদ দিয়ে যে সঞ্চয় থাকবে তা আগের সম্পদের সাথে জমা হবে। তাই প্রথমবার আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় অবশ্যই অভিজ্ঞ আয়কর আইনজীবী (ইনকাম ট্যাক্স প্র্যাকটিসনার)’র সাথে পরামর্শ করে আপনার বর্তমান সবধরনের সম্পদ আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করে নিন। নইলে পরবর্তীতে আপনাকে মহা হ্যাপা পোহাতে হবে এই সম্পদ অন্তর্ভুক্তির জন্য।
আসুন আয় নিয়ে কথা বলি, হাজার হলেও আয়কর! আমাদের আয়কর আইনে আয়ের সাতটি খাত উল্লেখ রয়েছে। এগুলো হলঃ
* বেতন খাতে আয়
* সিকিউরিটির সুদ থেকে আয়
* গৃহসম্পত্তি খাতে আয়
* কৃষি খাতে আয়
* ব্যবসায় বা পেশা খাতে আয়
* মূলধনি লাভ
* অন্যান্য উৎস খাতে আয়
আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার ফরম এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) এর ওয়েবসাইটে http://www.nbr-bd.org/incometax.html পাওয়া যাবে। আর গাইড লাইনতো আগেই লিংক দিলাম, সেটাও এই ওয়েব সাইটেই পাবেন।
এখন আসেন আয়ের হিসেব করা নিয়ে কথা বলি। আপনি উপরের সাতটা খাত হতে প্রতি বছর কত টাকা আয় করলেন তার একটা হিসেব করতে হবে আপনাকে। বর্তমানে এটা আরও সহজ করে দিয়েছে রাজস্ব বোর্ড, অনলাইন ট্যাক্স ক্যালকুলেটর চালু করে। এই লিংক হতে Click This Link আপনি আপনার আয়ের তথ্য ইনপুট দিয়ে দিয়ে আপনার মোট আয়, করের আওতাধীন আয় (ট্যাক্সেবল ইনকাম) এবং প্রদেয় কর সম্পর্কে জেনে যাবেন নিমিষেই।
আমাদের আয়কর হার কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশের চাইতে নমনীয়, বিশ্বাস না হলে খুঁজে দেখুন, এই অন্তঃজালে। তো বর্তমানে আমাদের আয়কর আইন অনুযায়ী আয়করের যে হার তা এরকম (ইংরেজিটাই তুলে দিলাম) উপরে দেয়া Income Tax at a Glance এই লিংকে পাবেন। উল্লেখ্য থাকে যে, প্রতি বছর বাজেটের সময় আয়কর আইনে কিছু পরিবর্তন, পরিমার্জন এবং সংশোধন হয়ে থাকে। ফলে আয়করের হার সহ আরও অনেক নিউমেরিক্যাল ফিগারে পরিবর্তন আসে। তাই, ফি বছর রাজস্ব বোর্ড পরিপত্র ইস্যু করে যা সেগুনবাগিচাস্থ রাজস্ব বোর্ড বা নীলক্ষেতে বইয়ের দোকানে কিতে পাওয়া যায়। আর এখন তো তাদের ওয়েবসাইটেই http://www.nbr-bd.org/IncomeTax/ সব তথ্য পেয়ে যাচ্ছেন।
এখন একটা মজার বিষয়ে আসা যাক, তা হল আপনি যদি দেখেন আপনার প্রদেয় কর ২০০ টাকা বা এরকম বের হয়েছে, তখন কিন্তু আপনাকে একটা ন্যূনতম কর দিতে হবে। তার হার হলঃ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৩,০০০ টাকা, জেলা সদরে ২,০০০ টাকা এবং বাকী এলাকায় ১,০০০ টাকা। এলাকা বলতে আপনার টিআইএন যে এলাকার আওতায় নিবন্ধিত হয়েছে।
এখন ব্যায়ের কথা বলা হয় নাই, আপনার আয় হতে আপনি ইচ্ছা মত ব্যয় করতে পারেন, কিন্তু রাজস্ব বোর্ড সব ব্যয় মেনে নিবে না। তাদের একটি গাইড লাইন আছে এই ব্যয় জন্য। আপনি যখন অনলাইন ক্যালকুলেটরে আপনার আয় ইনপুট করবেন সাথে সাথে ব্যয় বাবদ কতটাকা সেই খাত হতে মওকুফ পাবেন তা জেনে যাবেন। 

এখন আসুন কর দেয়ার উপায়। আমরা অনেক সময় “উৎসে কর কর্তন” এবং “অগ্রিম কর” এই দুটি শব্দ শুনে থাকি। এই দুটোই কিন্তু কর প্রদানের একটা মাধ্যম। আপনি যে যে ক্ষেত্রে উৎসে কর (টিডিএস) দিয়ে এসেছেন তা রিটার্নে উল্লেখ করে অবশিষ্ট টাকা পে-অর্ডার করে রাজস্ব বোর্ড বরাবর জমা দিবেন। আর অগ্রিম করের ব্যাপার হল, ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে আগের বছরের প্রদেয় করের হিসেব অনুযায়ী অথবা সম্ভাব্য একটা আয়ের হিসেব মোতাবেক অগ্রিম করের ব্যাপার হল, ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে আগের বছরের প্রদেয় করের হিসেব অনুযায়ী অথবা সম্ভাব্য একটা আয়ের হিসেব মোতাবেক অগ্রিম কর প্রদান করা। বছর শেষে তা এডজাস্ট হবে রিটার্ন জমা দেয়ার সময়। 
এখন কিন্তু অনলাইনেই আপনি রিটার্ন জমা দেয়া থেকে শুরু করে ই-টিআইএন সার্টিফিকেট পর্যন্ত পেয়ে যাচ্ছেন। আমি আর না প্যাচাই, একবার এনবিআর এর ওয়েবসাইটে ঢু মারুন, দেখবেন অনেক কিছুই বুঝতে পারছেন। এছাড়া নীলক্ষেত বা এরকম বইয়ের দোকানগুলোতে খোঁজ করলে আয়কর আইন ছাড়াও সহজ করে লেখা বিভিন্ন বই পাবেন যা হতে আপনি আয়কর সম্পর্কে একটা প্রাথমিক কিন্তু কার্যকর ধারনা পাবেন। আপনার প্রয়োজনেই আপনার আইন জানা দরকার। 

শেয়ার করুন

লেখকঃ

আমি আইন যুদ্ধে একজন লড়াকু সৈনিক। আইন সচেতন নাগরিক সমাজ গঠনে কাজ করে যাচ্ছি। পোস্টটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তাহলে নিচে একটি গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য অনুরোধ রইলো। আশা করি গঠনমূলক মন্তব্য করে আমাদের চলার পথকে আরো বেশি বেগবান করে তুলবেন।

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট